Gloomy Sunday"

 "Gloomy Sunday"


Oct 1, 2022


-কিরে সায়ন আজ প্র্যাকটিস করতে যাবি না?
-আরে রক্তিম দা তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছো যে।
-কেন আমাদের ব্যান্ডের জ্যামিং এর টাইম তো এটাই?
-কিন্তু ওরা তো সবাই আজ দেরি করে আসবে বলেছে , কেন তোমায় জানায়নি?
-ইস একদমই মাথায় ছিল না... বেকার বেকার এক ঘন্টা আগে চলে এলাম।
-আরে কোন ব্যাপার না, বসতো। কাজের চাপে তোমার সাথে তো আর আগের মত গল্পই করা হয় না.. দাঁড়াও চায়ের ব্যবস্থা করছি..

এই বলে সায়ন তার মাকে চা বানানোর কথা বলতে চলে গেল...
রক্তিম আর সায়ন দুজনই এক ব্যান্ডের মেম্বার চার বছর নাগাদ। রক্তিম ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট আর ভোকালে সায়ন। যদিও তাদের ব্যান্ড টা খুব একটা বড়সড় নয়, তবে মিউজিকের বিষয়ে ব্যান্ডের প্রত্যেকটা মেম্বার ভীষণ প্যাসনেট তাই ধরে রেখেছে। তাছাড়াও ব্যান্ডের পাশাপাশি সবাই কোন না কোন বিজনেস অথবা জবের সাথে যুক্ত। প্রত্যেক উইকেন্ডে সন্ধ্যে সাতটার সময় জ্যামিং সেশন বসে।

চা করার কথা বলে সায়ন আবার ঘরে এলো..
-আরে রক্তিম দা খবর সবর বল.. কাল নয়ন দিদি সুসাইড করেছে শুনেছো? শ্বশুরবাড়িতে নাকি খুব অত্যাচার হতো।
-সবই শুনলাম খুবই প্যাথেটিক। মেয়েটা আমাদের থেকে এক বছরের জুনিয়ার ছিল। একই স্কুলে পড়তাম। ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আসলে কি জানিস তো আজকাল মানুষদের চেনা বড়ই দায়। ছাড় ওসব।
-আর বল কোন গল্পস্বল্প আছে নাকি?
-গল্পস্বল্প আছে তবে এই দুনিয়ার না।
-এই দুনিয়ার না মানে? কিছু আবার সুপার ন্যাচারাল টুপার ন্যাচারাল নাকি...
-হ্যাঁ সত্যি বলতে, এই সুসাইড নিয়েই একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস ঘাটাঘাটি করছিলাম কয়েকদিন নাগাদ
-সেটা আবার কেমন?
-একটা গান রয়েছে বুঝলি তো, সেই গানটা শুনলে নাকি সবাই সুসাইড করে
-ধুর সেরকম আবার হয় নাকি!
-তাহলে শোন প্রথম থেকেই বলি গানটার ইতিবৃত্তান্ত। হাঙ্গেরির একটা গান ছিল, গানটার নাম "Gloomy Sunday" বেসিক্যালি গানটার বিষয়বস্তু এই যে গানের protagonist প্রেমিকের মারা যাওয়ার পর বিরহে নিজেও সুসাইড কমিট করতে চাইছে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এই যে ১৯৩০ সালের প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী গানটা শোনার পর ইউনাইটেড স্টেটস আর হাঙ্গেরি মিলিয়ে মোট ১০০ জনের উপর মানুষ নকি সত্যিকারেই সুসাইড কমিট করেছিল। গানের আসল লেখকও গান লেখার 35 বছর পর নিজেও সুসাইড কমিট করে। BBC নাকি সেসবের পর গানটা নিজেদের রেডিওতে ব্যান করে দিয়েছিল। বিবিসি ছাড়াও বিভিন্ন রেডিও চ্যানেলে সেই গান বাজানো একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল।
দেখ উইকিপিডিয়া এই পেজটা এখানে সব লেখা রয়েছে ( https://en.m.wikipedia.org/wiki/Gloomy_Sunday)
-আরে এ তো সত্যিই খুব ভয়ংকর ব্যাপার, আমি বাবা আবার এমনিতেই ভীতু মানুষ, আচ্ছা রক্তিম দা তুমি তুমি কি গানটা শুনেছ?
-হ্যাঁ শুনেছি তবে বিলি হলিডের ইংলিশ ভার্সন টা, অরিজিনাল হাঙ্গেরিয়ান ভার্সনটা এখন প্রায় লস্ট মিডিয়া, তাই খুঁজে পাওয়া খুব চাপের।
-গানটা কি pop নাকি folk?
-তুই শুনবি? আরে শোন না, কিচ্ছু হবে না ইংলিশ ভার্শন টা তো অরিজিনাল ভার্সন নয়, আর তা বাদেও এসব urban legend, আমার তো মনে হয় না এসব সত্যি কথা! শুনে দেখ গানটা সত্যিই অসাধারণ এত মেলানকলিক সুর.. এই যে শুনে দেখ
( https://youtu.be/XQ2AuLaClmk )

[গান বাজাতে থাকে]
"Sunday is gloomy
My hours are slumberless
Dearest, the shadows
I live with are numberless"


-সত্যি রক্তিম দা, গানটা সত্যিই অসাধারণ! এত সুন্দর একটা গানের উপর এরকম একটা কুৎসিত অপবাদ সত্যিই খুবই আনজাস্টিফাইডি। এই গানটা আমার খুব ভালো লেগেছে গানটা কভার করবো বুঝলে।
ইন্টারনেট থেকে খুঁজে বের করো তো একচুয়াল কর্ডস গুলো কি কি আছে।

সেদিন আর দুজনেরই রিহার্সেলে যাওয়া হয়নি...


তিনদিন পর রাত বারোটা নাগাদ রক্তিম তার গার্লফ্রেন্ড তিন্নির সাথে ফোনে যখন কথা বলছিল.. তার ফোনে আর একটা কল আসে
-তিন্নি একটু পরে তোমাকে কল ব্যাক করছি। সায়ন ফোন করেছে।
-এত রাতে আবার ফোন করেছে কেন?
-কি জানি দাঁড়াও একটু
এই বলে রক্তিম তিন্নির ফোনটা রেখে সায়ানের ফোন ধরে.. ফোনের ঐদিক থেকে ভেসে ওঠে..
-আচ্ছা রক্তিমদা, টরেন্ট থেকে ফাইল কি করে ডাউনলোড করতে হয় জানো?
-কেন কি ডাউনলোড করবি?
-আরে বলো না তারাতারি.. সেই Gloomy Sunday গানটার অরিজিনাল ভার্সন খুজে পেয়েছি Torrent এ, তুমি না বলেছিলে লস্ট মিডিয়া, সত্যি তাই। তিন দিন ধরে খুজে যাচ্ছি ফাইনালি আজকে পেলাম তাও টোরেন্টে। কিন্তু টোরেন্ট থেকে তো ডাউনলোড করতে আমি জানিনা, তুমি বলো তো কি করে করতে হয়..
-বাবা ! তোর এত সাহস হয়েছে ! আমি তো ভাবিনিই যে তুই অরজিনাল ভার্সনটা খুজতে শুরু করে দিবি, দেখিস আবার মরে টরে যাস না গানটা শোনার পর.. হাহা
-আরে তুমি বলো কি করে ডাউনলোড করতে হয়

রক্তিম তাকে টরেন্ট থেকে ফাইল ডাউনলোড করার পদ্ধতি বলে দেয়।

-কাল একবার আমাদের বাড়িতে এসোতো, এটা নিয়ে বসা যাবে। একসাথে মিলেই শুনবো, আজ ডাউনলোড করে রাখবো।
-যাক আমাদের ভীতু সায়ন অতটাও পাল্টায়নি তবে। হা হা! ঠিক আছে কাল সন্ধ্যায় যাবো। কাল দেখা হবে...

রক্তিমের আর পরের দিন সন্ধ্যায় সায়নের বাড়ি যাওয়া হয়নি। কারণ তাকে সকালেই যেতে হয়েছিল।

-হ্যালো আমি তথাগত বলছি, তুই তাড়াতাড়ি একটু সায়নের বাড়িতে আয় তো , একটা খুব বাজে কান্ড ঘটে গেছে।

রক্তিম সায়নের বাড়ির গেটে পৌঁছতেই বাড়ির ভেতরে অনেক পুলিশ লক্ষ্য করল।

বেডরুমে সায়নের লাশ ঝুলছে।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট যখন এল তখন তাদের আন্দাজ অনুযায়ী রাত একটার সময় ঘটনাটি ঘটেছে। কেউ জানে না আত্মহত্যার কারণ!

রক্তিম ছাড়া।

রক্তিম জানে এটা সুসাইড নয়, বরং এটা একটা হত্যা, যেটা সে নিজেই করেছে। কারণ রক্তিমের মনে কোন সন্দেহই ছিলনা যে সেদিন ফোন রাখার পর টোরেন্ট থেকে অরিজিনাল গানটা ডাউনলোড করে শোনার ফলস্বরূপই এই পরিণতি। এই মৃত্যুর জন্য গানের সাথে সেও সমান ভাবে দায়ী । সেদিন রাত্রে যদি রক্তিম সায়নকে ভীতু বলে provoke না করতো, তাহলে হয়তো পরের দিন সন্ধ্যায় একসাথে গানটি শোনার জন্য সায়ন অপেক্ষা করত।

পাঁচ দিন হয়ে গেল রক্তিম ঠিকভাবে কিছু খেতে পারে না রাতেও তার ঠিক মত ঘুম হয় না। খালি বার বার সায়নের কথা মনে পড়ে। আর তার থেকেও বেশি মনে Gloomy Sunday গানটার কথা। সত্যি কি একখানা এত সুন্দর গানের এত কুৎসিত রূপ থাকতে পারে?
যদিও সে নিজে অরিজিনাল হাঙ্গেরিয়ান ভার্সনটি শোনেনি আর সায়ানের ঘনটনার পর শোনার ইচ্ছাও আর নেই তার ! তবে সে যে ইংলিশ ভার্সনটি শুনেছে সেটি খুবই মধুর, আবেগপ্রবণ আর মিলানকলিকও বটে, মনে মনে ভাবে সে!

ভাবতে ভাবতে রাত দুটো বেজে যায়...
রক্তিম তার বিছানা থেকে উঠে গিটার হাতে নেয়।
আর গান বেজে ওঠে গিটারে...

Angels have no thoughts
Of ever returning you
Would they be angry
If I thought of joining you
Gloomy Sunday

[ Scene reference : https://youtu.be/7NwQmTh9MZ0 ]

পরের দিন সকালে নিউজ পেপারে......

"এক সপ্তাহের মধ্যেই দুজন বন্ধুর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু এবং দুটোই আত্মহত্যা । ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরে। পুলিশ ঘটনাটির অনুসন্ধান চালাচ্ছে, তবে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। বাড়ির আত্মীয়রা এবং বন্ধুবান্ধদের ও জেরায় কিছু সঠিক তথ্য এখনো উঠে আসেনি। পরপর দুই বন্ধুর আত্মহত্যায় সকল এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত। রক্তিম চ্যাটার্জী, বয়স ২৫, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ীরা শনিবার রাত তিনটা নাগাদ হাত কেটে আত্মহত্যা করে........ "

Original version(Hungerian version) of Gloomy Sunday : https://youtu.be/xBgLqHc3iw4

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form