সাইকোপ্যাথি

সাইকোপ্যাথি




1
পার্থ বাবু চোখ খুললেন। প্রায় চার ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরল তার। তিনি এক ফ্ল্যাট এর মেঝেতে পরে ছিলেন এতক্ষণ ধরে। চোখ খলার পরই তিনি বুঝতে তে পারলেন যে তার মাথার পেছন দিকটা ব্যাথায় ফেটে পরছে,সাথে এটাও বুঝতে বাকি রইলনা যে তাকে কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে মাথায় । লক্ষ করলেন তার জামা কাপড় ভেজা। বাইরে থেকে বৃষ্টির শব্দ বাকি অন্য শব্দ গুলো কে কানে তার ঢুকতে দিচ্ছে না। জানলার দিকে তাকালেন তিনি, বুঝলেন যে মোটামুটি তিনি চার তালায় তো আছেনই। অথচ ঘরের ভেতর টা তাঁর কাছে বেশ অপরিচিত। ঘড়ে খালি একটা জিরো পাওয়ার এর বাল্ব জ্বলতে থাকায় ভেতরের পরিবেশ টা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর বুক কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। তিনি আগের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলেন। নাহ! কিছুতেই মনে পরছেনা! যাইহোক আগে ঘরের লাইট জ্বলানো দরকার। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তার মাথা ফেটে গেছে। ঊফফ কী অসহ্য যন্ত্রণা! লাইট জ্বালানোর আশা নিয়ে তিনি অন্ধকারের মধ্যেই সুইচ বোর্ড এর উদ্দেশ্যে লক্ষভ্রষ্টদের মত এদিক ওদিক হাতড়াতে শুরু করলেন। হটাতই তার পায়ের নীচে তরল পিচ্ছিল কিছু একটা পড়ায় তিনি নিজের ভারসাম্য আর রাখতে পারলেন না। উল্টে পরলেন ঠিক কিছু একটার ওপরে। একমিনিট এটা তো একটা মানুষ এর শরীর মনে হচ্ছে! লোকটা কি অজ্ঞান ?নাকি মারা গেছে? নাহ! এটা একটা মহিলার দেহ! গোঁটা গা ভেজা! সম্ভবত রক্ত! নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি মহিলাটিকে জাগানোর চেষ্টা করলেন! বৃথা চেষ্টা! হঠাৎই পার্থ বাবুর নিজের বুক পকেট এ থাকা মোবাইল এর কথা মনে পোড়ে গেল।'ওঁটাতেও তো টর্চ রয়েছে। যাক ভালো সময়য়েই মনে পরেছে।' পার্থ বাবু মনে মনে ভাব্লেন। নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলেন টর্চ জালিয়ে তিনি যা দেখলেন তা পার্থ বাবুর কাছে নরকের সবচেয়ে ভয়াবহ জিনিস এর ভয়াবহ মনে হল! তাঁর সামনে যে দেহ টা পরেছিল সেটা কে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে। মাথা তে বারবার কিছু দিয়ে আঘাত করার ফলে মাথা পুরপুরি থেঁতো হয়ে গেছে আর গোঁটা শরীর জুড়ে একাধিক চাকুর দাগ স্পষ্ট। কি ভয়াবহ! এটা কোনও মানুষের কাজ ভেবেই তার শরীর শিউরে উঠল। সত্যি যে বা যারা তাকে খুন করেছে তার সাথে পশুর কোনও তফাৎ নেই। তিনি আবার পুরো ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুই তার মনে পরছেনা। হঠাৎ দরজা খলার একটা আওয়াজ এল। পার্থ বাবু ভয়ে দমরে গেলে। তার গা হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। কে এলো? এটা সেই খুনিটা না তো? এবার কি তবে তার পালা? তাকে কি তাকেও নির্মম ভাবে শেষ অবধি মরতে হবে? না তিনি এত তারাতারি মরতে চাননা। পার্থ বাবু টর্চ এর আলোতে উঠে দারালেন আর লুকনোর জাইয়গা খুঁজতে আরম্ভ করলেন। শেষ অব্ধি তিনি আর জায়গা না পেয়ে খাটের তলে লুকলেন আর মোবাইল এর আলো বন্ধ করে দিলেন।


ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। খাটের তল থেকে তিনি গোঁটা ঘড়ের মেঝেতে খালি রক্তের বন্যাই দেখতে পেলেন। তার জামা কাপড় আব্ধি রক্তে মাখামাখি। ঘড়ে দুটো মানুষ এর প্রবেশ ঘটল, পা গুলতে দুইজনএরই কালো সুট আর কালো সু। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করলো...


-লোকটা গেলো কথায়?


-যেখানেই যাক এখনও বেশি দুর যেতে পারেনি হয়তো


-হ্যাঁ ঠিক! যেভাবেই হোক ওকে পালাটে দেয়া যাবেনা।


-আমাদের এখনি বেরিয়ে পড়া উচিৎ লোকটাকে ধরতে হলে


-চলুন বেড়িয়ে পড়া যাক


এরপর দরজা বন্ধের আওয়াজ পার্থ বাবুর কানে এলো। এর পর আর বুঝতে অসুবিধা হল না যে খুনটা তারাই করেছে। তিনি কোনও ভাবে বেচে গাছেন এটা জেনে তারা আবার এসেছিলো তাকে মারতে।নাহ! এই জায়গা টা তার মতেও ভালো ঠেকছেনা।নাহ!এবার তাকে পালাতেই হবে। বাচার উদ্দেশে, নিরাপদ আশ্রয় এর উদ্দেশে! পার্থ বাবু সোজা পুলিশ স্টেশন জাওয়ার পরিকল্পনা করলে। খাট এর নিচ থেকে বেরনোর সময় খাটের কোনার সাথে মাথায় আবার বড়ি খেলেন। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো যেন পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ তার কপালে এসেই আজকের দিনে জমা হয়েছে! এদিকে মাথা দিয়ে আগের চেয়ে বেশি রক্ত বইছে। শেষ অবধি লাইট জালানোর পর পার্থ বাবু কাপড় খুঁজতে লাগলেন মাথাই বাধবেন বলে। কিন্তু শেষ অবধি কিছু খুজে না পাওয়ায় সামনে থাকা এক গামছা ছিরে মাঠায় বাধলেন। নাহ! দেরি করা যাবেনা আর। বেড়িয়ে পরলেন দরজা খুলে। নীচে নেমে ফ্ল্যাট থেকে বেরনো মাত্রই বৃষ্টি আরও বেড়ে গেলো। এর চেয়ে আর কি বা খারাপ হওয়া বাকি আছে?


বৃষ্টি বরাবর ই পছন্দ পার্থ বাবুর, কিন্তু আজ যেন বৃষ্টি টা তার কাছে বিরক্তি লাগছিল। তিন ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত বৃষ্টি চলার কারনে পথ ঘাটে হাঁটু অবধি জল। যদিও এটা কলকাতার রাস্তায় নতুন কোনও ব্যাপার না। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটু জল এ তিনি হেঁটে চললেন। চরা সুরে জল পরার আওয়াজ এর সাথে সাথে মেঘ এর ডাক যেন রাত বারোটার নিস্তব্ধতা কে কোনরকম গুরুত্ব দিচ্ছিলনা।রাত এর কলকাতা কে আগে তিনি কোনদিনও এভাবে দেখেননি।তখনি পার্থ বাবু বুঝতে পারলেন তিনি রাস্তা ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে এসেছেন। কি হচ্ছে আজ এসব তার সাথে। উফ আর পারা যায় না। হতাৎ তার মাথায় একটা চিন্তার উদ্বেগ হল। আচ্ছা পার্থ বাবু পুলিশ স্টেসন এ গিয়ে বলবেন টা কি? তার তো নিজের নাম অভধি মনে নেই! আর তা বাদ এও তিনি দুই খুনির চেহারাও দেখতে পাননি! তবে! এবার? কি করবেন এবার!


"হ্যান্ডআপ" পেছন থেকে শব্দ এলো। পার্থ বাবু বুজলেন যে এবার আর তার নিস্তার নেই। তিনি আস্তে করে পেছন ঘুরলেন, হ্যাঁ! তিনি ঠিক যেমন ভেবেছিলেন তাই! ঐ দুটো লোক যাদের কালো প্যান্ট কালো জুতো।


বৃষ্টি থেমে গেছে ইতিমধ্যেই। তবে তার ভেজা চূল থেকে বৃষ্টির জল মুখ এর ওপর এখনো গড়িয়ে পড়ছেই! বৃষ্টি থেমে জাওয়ায় নিস্তব্ধতা এখন চারিদিকে বিরাজমান। পার্থ বাবুর শরীর আবার কাঁপতে শুরু কারেদিয়েছে। "পালানর চেষ্টা বৃথা । তাই ভুল করেও পালানোর চেষ্টা করবেননা ।তাহলে কিন্তু আপনারি ঊল্টো ক্ষতি হতে.........।'


কথাটি শেষ না হতেই তাদের কিছু বুঝে ওঠার আগে পার্থ বাবু দুম করে তার বলিষ্ঠ শরীর দিয়ে এক ধাক্কায় দুজন কে ম্যানহোলএর পাশে জমা জল এর ওপর ফেলে দিলেন। অবশেষ এ বাচার তিনি আরও একখানা সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দৌরতে শুরু করলেন। যে করেই হোক তাকে পালাতে হবেই। হঠাৎ ই তারচেয়েও একটা দ্রুতগতি সম্পন্ন বস্তু তার গায়ের পাশ দিয়ে চলে গেল। বুলেট!!!!!! দ্বিতীয় গুলিটা মোটেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হোলো না। সোজা এসে লাগলো তার বাঁ কাঁধে। "নাহ! তাকে কোনও ভাবে বাচতেই হবে। এত মূল্যবান প্রাণটি তিনি এতো সহজে হারাতে দিতে পারেননা " তিনি মনে মনে ভাবলেন।


হাতে লাগা গুলির পাশবিক যন্ত্রণা কে গ্রাহ্য করে তিনি ছুটতে লাগলেন রাস্তায় জমে থাকা জলের ওপর দিয়ে।কিন্তু বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারলেনা! অনেকটা রক্ত শরীর থেকে বেড়িয়ে গাছে ইতিমধ্যেই আর তার কারনেই তিনি এখন দুর্বল। হঠাৎ তার সামনের একটি বাড়ি খুব চেনা মনে হল। এটাই একমাত্র উপাই এখন তার কাছে। যে করেই হোক তাকে বাচতে হবে।

2

অরুন বাবু তার স্ত্রী আর কন্যা কে নিয়ে একাই থাকেন । পেশায় তিনি এক অফিস কর্মচারী । কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটএ এক ফ্ল্যাটের গ্রাউন্ড ফ্লোরে তার এপার্টমেন্ট । কলেজে আরুন বাবু আর পার্থ বাবু একসাথেই পরতেন। একজন এর ইংরাজি আরাকজন ইকনমিক্স । তখন থেকে একসাথে ঘোরা, আড্ডা , থিয়েটার দ্যাখা এসব। কলেজ পার করে দুজন আলাদা পেশায় চলে আশার পর দ্যাখা সাক্ষাৎ যদিও কমে গেছে কিন্তু বন্ধুতে ছেদ পরেনি। প্রায় মাঝে মাঝেই ফোনে একে অপরের খবর নেন তারা। কিছুদিন আগেই পার্থ বাবুর নেমন্তন্নও ছিল আরুন বাবুর কলেজ স্ট্রীট এর নতুন বাড়িতে। পার্থ বাবু এখনও অবধি বিয়ে না করায় একাই এসেছিলেন সেদিন।

তখন রাত একটা ,অরুন বাবুর স্ত্রী তার মেয়ে পাখি কে ঘুম পারিয়ে নিজের ঘরে শুতে যাচ্ছিলেন। অরুন বাবু ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে পরেছেন! হঠাৎ ই বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠল। অরুন বাবুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিরক্তির সুরে তিনি বললেন 'এত রাতে আবার কে এলো রে বাবা।' এখন অনেক রাত তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকেই বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলতে যেতে হবে। বিরক্তিকর।বিছানা থেকে নেমে তিনি দরজার সামনে গেলেন। কিন্তু দরজা খুলেই তিনি যে এমন এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পড়বেন তা তিনি আগে কখনো কল্পনাও করতে পারেননি ।

''আমাকে বাচান দাদা। ওরা আমায় মেরে ফেলবে, বাচান দয়া করে। ওরা পশু ওরা ঐ মহিলাটাকেও খুন করেছে, এবার আমাকেও করবে"

আরুন বাবু লোকটার চেহারা দ্যাখা মাত্র বুঝতে পারলেন এটা আর তার বন্ধু পার্থ বাবু ছাড়া আর কেও নন। একি অবস্থা তার। গোঁটা গা রক্তে ভেজা, যেন কোন পরাজিত সৈনিক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে কোনমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরেছে। আরও একটু ভালো মত করে দেখতেই তিনি বুঝতে পারলেন যে তার বাঁ হাতে গুলি লেগেছে, আর সেখান থেকেই ক্রমাগত রক্ত ঝরছে।

'কিরে? একি হাল তোর? কে খুন করবে তোকে? হাতে গুলি লাগলো কি করে? আর দাদা দাদাই বা বলছিস কেন আমায়?" সাথে সাথে এতগুলো প্রশ্নের দ্বারা বিমল বাবু আরুন বাবু কে ঝাঁজরা করে দিল।

'আমায় বাচান দয়া করে' এই বলেই সেই মুহূর্তে পার্থ বাবু অজ্ঞান হয়ে পরলেন!

3

পার্থবাবু  আবার চোখ খুললেন । সেই একি রকম পরিস্থিতি, নরক সমান, যা কিছুখন আগে তার জীবন কে পালটে দিয়েছে পুরপুরি। এখনো তিনি আবার সেই একি রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি। তিনি পরে আছেন ঠিক সেই একই রকম ফ্ল্যাট এর ফ্লোরে, কিন্তু নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই তার, গোঁটা শরীরটাই যেন অবশ হয়ে পরেছে। অনেক চেষ্টা করার পরও কিছুতেই তিনি মেঝে থেকে উঠতে পারলেন না । চারিদিকে রক্ত ছড়িয়ে আছে। হায় ভগবান! কি হচ্ছে তার সাথে! অনেক চেষ্টার পর তিনি তার মাথাটি সামান্য ওপরে তুললেন। তিনি লক্ষ করলেন ঘরে দুই ছায়ামূর্তি। একটি পুরুষ আরাকটি মহিলা । হটাত করে মহিলা টি আর্তনাদ করতে শুরু করলো......
"আমায় মারবেন না, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? মারবেন না"
"আরে মারতে আবার কারণ লাগে নাকি?" পুরুষ ছায়ামূর্তির উত্তর!"
পুরুষ ছায়ামূর্তির গলা তার খুব চেনা চেনা মনে হল। কিন্তু তিনি কিছুতেই সঠিক ভাবে মনে করতে পারেলেনা যে গলাটি কার। তিনি লক্ষ করলেন যে মহিলা ছায়ামূর্তিটি হটাত করে কোন বস্তু দিয়ে পুরুষ ছায়ামূর্তির মাথায় জোরে প্রহার করলো। পুরুষ ছায়ামূর্তি টি এবার ক্ষিপ্ততার সাথে মহিলা ছায়া মূর্তির হাত থেকে সেই বস্তুটি কেঁড়ে নিয়ে  মহিলার মাথায় নিস্রংস ভাবে প্রহার করতে লাগলো। দেহটি মেঝের ওপর পরে গেল। কিন্তু তাতেও পুরুষটির শান্তি হয়নি। এবার সে পকেট থেকে ধারাল কিছু একটা বের করে মেঝেতে পরে থাকা দেহটির ওপর চালাতে লাগলো। কি অমানবিক। এই দৃশ্য দেখে পার্থ বাবুর চোখ থেকে জল বেড়িয়ে গেল। নাহ! তিনি কোনভবেই তার সামনে এরকম খুন করা বরদাস্ত করতে পারেন না। পার্থ বাবু তার শরীর এর সমস্ত শক্তি জড় করে উঠে দাঁড়ালেন, যেভাবেই হোক তাকেই এবার কিছু একটা করতে হবে। এটা এখন তার আর ভয় পাওয়ার সময় নয়। সময় নষ্ট না করে এক ঝাপ দিলেন তিনি সেই ছায়া মূর্তির ওপর। জাপটে ধরলেন যত জোরে সম্ভব।তিনি দেখলেন হাতের সামনেই একটা বস্তু আছে। এক হাত দিয়ে সমস্ত বল প্রয়গ করে কোন রকমে সেটি নিলেন নিজের হাতে, আর প্রহার করলেন সেই খুনির মাথায়। খুনি অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো। ঘরে এখন নিস্থভধতা।কিন্তু বাইরে বৃষ্টি পরছে। একি? তিনি মেরে ফেললেন নাতো লোকটিকে? পার্থ বাবু হাঁটু গেরে বসলেন আর নিজের পকেট হাতড়াতে লাগলেন। না মোবাইলটি এখনো তার পকেটেই আছে। মোবাইল বের করে তিনি টর্চ অন করে আলো ফেললেন খুনির মুখ এর ওপর। ফেলা মাত্রই তিনি বুঝতে পারলেন খুনির গলাটি তার কাছে কেন এত পরিচিত লাগছিলো। এই গলা পরিচিত কারণ সেই মুখ আর কারো নয় সেই রহস্যময় খুনি ছায়া মূর্তির মুখ খোদ পার্থ বাবুরই!

4

পার্থ বাবুর অচৈতন্যতা ভাঙল। তিনি আসলে স্বপ্ন দেখছিলেন; নিজের স্বপ্ন। কিছুক্ষণ আগে যা তিনি মহিলাটির সাথে করেছিলেন। হ্যাঁ! তিনি নিজেই খুনটি করেছিলেন।মুহূর্তের মধ্যেই পার্থ বাবুর সব ঘটনা মনে পরে গেলো । এটা তার বারো নম্বর খুন। খুন করতে তার ভালই লাগে। হুম;তাই তিনি এতদিন যতগুলো খুন করেছেন সব গুলোই কোনও মটিভ ছারাই। তিনি হলেন একজন প্রকৃত সাইকপ্যাথ। খুন করে মজা পান বলে খুন করেন; আর কিছুনা। পার্থ বাবুর মনে পরে গেল তার ছোট বেলার কথা যখন তিনি মায়ের হাত ধরে ডাক্তার এর কাছে কাউন্সিলিং এ যেতেন।
তিনি যখন সুস্থ হওার পথে তখন তার মা মারা যান।বাবা অবশ্য আগেই মারা গিয়েছিলেন তাই মা মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে তার ভাই এর সমস্থ দায়িত্ত তার কাঁধের ওপর এসে পরে। ব্যাস্ততা আর কাজের চাপ এই দুটোর ফলে তার আর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার মানসিক ব্যাধি বারতেই থাকে। আর শেষ পর্যন্ত তিনি আজ এই অবস্থায়। সব কিছু ঠিক ঠাকই চলছিলো এতদিন কিন্তু শেষ অভধি লোকাল পুলিশ তার কেস টা সিবিয়াই এর কাছে হ্যান্ড ওভার করে দেওয়ার পর থেকে সব কিছু যেন বিগরে যায়। ওই কালো সুট প্যান্ট পড়া লোক গুলো আসলে সিবিয়াই এজেন্ট। যাই হোক এখন আর বাচার কোনও উপায় নেই তার কাছে,কারণ তারা পার্থ বাবুর মুখ চিনে ফেলেছে ,মৃত্যু তার অনিবার্য। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে যতগুলো সম্ভব তার ভালো লাগার কাজ গুলো করতে হবে, তাইতো নাকি?
বিছানা থেকে উঠলেন তিনি। ঘরে লাইট জ্বলছে, হুম এটা অরুন এর গেস্ট রুম টা। তার ডান কাঁধ টা অজস্র ব্যাথা করছে। পার্থ বাবু জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। এখনো রাত তবে আর বৃষ্টিটাও আবার শুরু হয়েছে।কিন্তু খুব দুর্বল মনে হচ্ছে নিজেকে তার। কোনওমতে তিনি তার ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুম এ এলেন। সেখানেও লাইট জলছে, সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন আরুন বাবু। তাকে দেখা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন... "কিরে তুই উঠে এলি কেন? যা এখনি গিয়ে শুয়ে পর। আরকটু ভোর হলে তোকে মেডিকাল কলেজ এ নিয়ে যাব। ততক্ষণ তুই শুয়ে নে। এখানে তুই একদম সেফ আছিস"
বন্ধু কি বলল তা পার্থ বাবু গুরুত্বই দিলেন না।শুধু একভাবে তাকিয়ে থাকলেন আরুন বাবুর দিকে। তার শরীর দেখে আবার পার্থ বাবুর মনে সেই খুন করার অদম্য পাশবিক প্রব্রিতি জেগে উঠল। আরাক খানা তাজা প্রান, কি চমৎকার। একদম নিখুদ একটা মানুষ এর শরীর। একে শেষ করতে পারলে যেন তার জীবন সার্থক। তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারছেন না, একে খুন করতেই হবে। এই ভবে খানিকটা নিজেকে প্রস্তুত করে নিচুু স্বরে বললেন...
"সেতো বুঝলাম আমি সেফ। কিন্তু তুই সেফ আছিস কি?"
বলা মাত্রই তার বন্ধু কে কোনও রকম সুযোগ না দিয়ে নিজের পকেট এ থাকা তার সবচেয়ে পছন্দের চাকুটা দিয়ে দিলেন এক কোপ আরুন বাবুর গলায়। তারপর সেই চাকুটার গায়ে লেগে থাকা রক্তের ওপর তাকালেন ।এই চাকুই তার সবসমইয়ের প্রিয় সঙ্গি, এই চাকু দিয়েই এক সময় পার্থ বাবু  তার বাবা কে খুন করেছিলেন...... আহ! কি স্বর্গীয় আনুভুতি! এবার আরএক কোপ বসালেন তার বুক এ... রক্তে গোটা ঘর ভেসে গেল। তার পর একের পর একটা কোপ......কি শান্তি! এর চেয়ে ভাল কিছু আর হয়না। আর ঠিক সেই মুহুরতেই পার্থ বাবুর পেছন দিক থেকে তার মাথায় কিছু একটার আঘাত পার্থ বাবুর চোখ এর সামনে অন্ধকার নেমে এল। তিনই আবার অচৈতন্য হয়ে পড়লেন!

পরের দিন সকালে আনন্দবাজার পত্রিকায়

অবশেষে ধরা পরলেন চোদ্দ জনের হত্যাকারী শ্রী পার্থ রাঞ্জন গুহ। লোকাল পুলিশ ও সিবিয়াই জানিয়েছে যে অনেকদিন ধরেই তিনি তার হত্যালিলা চালাচ্ছিলেন অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে , কিন্তু কাল রাতে দুই সিবিয়াই এজেন্ট সেই হত্যাকারির পরিচয় ফাঁস করেন। কলেজ স্টীটে এক বন্ধুর ফ্লাটে ঢুকে তিনি তার হত্যালিলা চালান বছর ৩৫ এর যুবক আরুন আচার্যর ওপর। ঠিক সেই মুহূর্তে আরুন বাবুর স্ত্রী, বিভা আচার্য, খুনির মাথায় আঘাত করায় খুনি অচৈতন্য হয়ে পরে এবং ধরা পরে। পুলিশ সুত্রে জানা যায় যে তিনি সম্পূর্ণই মানসিক বিকার গ্রস্থ যিনি এতগুল মার্ডার কোনও মটিভ ছারাই করেছিলেন.....



Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form